পেচ্ছাপখানা
সিনেমার ইন্টারভ্যালে কি সকলেরই হিসি পেয়ে যায়? না, আসলে সমস্যাটা মানসিক। মনের অবচেতনে একটা জিনিষ খেলতে থাকে, যদি ইন্টারভ্যালের পরে কোনও সময়ে পায়, তবে তো খানিকটা মিস করব। এমনিতে বাড়িতে বা অফিসে থাকলে থোড়াই লোকে ঘন্টায় ঘন্টায় বাথরুম দৌড়য়। ডায়াবেটিস থাকলে অবশ্য অন্য কথা। সিনেমার ইন্টারভ্যাল, না, ‘ভ্যাল’ তো না, ‘মিশন’। এখন লেখা থাকে ‘ইন্টারমিশন’। অবশ্য সেটা ইংরিজি ছবিতে। ভারতীয় ভাষার ছবি গুলোতে অনেক সময়ে বিরতি, বিশ্রাম, এ সবও থাকে। ছবিটা ইংরিজিই, নায়ক কেভিন কস্টনার। একটা লোক হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে আর একজনকে জিজ্ঞেস করল, ‘দাদা, পেচ্ছাপখানাটা কোনদিকে?’ যাঁকে জিজ্ঞেস করা হ’ল, তিনি মুখ বেঁকিয়ে বললেন, ‘দা লু ইজ দেয়ার, দ্যাট সাইড’। তারপর পাশে দাঁড়ানো আইসক্রীম হাতে ভদ্রলোককে বললেন, ‘স্টুপিড বাগার, ব্যাটাচ্ছেলে হলিউডের ছবি দেখছে, এদিকে ‘পেচ্ছাপখানা’’।, আইসক্রীম হাতে ভদ্রলোক খুব মনোযোগ দিয়ে খেয়াল রাখছিলেন, যাতে একটুও চকোলেটের আবরণ খসে মাটিতে না পড়ে। তিনি কোনও আমল দিলেননা কথাটার। ইনি আবার বললেন, ‘শালা বস্তির লোকগুলোও মানুষ হয়ে গেল’। পাশের জন চোখ বন্ধ করে চকোলেটের পরত ভেদ করে ভ্যানিলায় দাঁত বসিয়েছেন, এ কথারও সমর্থন এলনা।
যে লোকটি হন্তদন্ত হয়ে প্রস্রাবাগার খুঁজছিল, সে নির্দিষ্ট দিকে গিয়ে দেখল, ইংরিজিতে লেখা আছে, ‘টয়লেট’।, স্বাভাবিক কারণেই বাংলাতেও লেখা, ‘প্রসাধন’।, সে অবশ্য কোলকাতাবাসী হওয়ার সুবাদে এতদিনে জেনে গেছে, পেচ্ছাপখানা কেন, ইংরিজিতে ‘ইউরিনাল’ লেখাটাও অশোভন। তাই পেচ্ছাপ করতে ‘প্রসাধন’ লেখা ঘরেই ঢুকল সে। একদিকে লেডিজ, অন্যদিকে জেন্টস লেখা, সেদিকটা যে পুরুষদের, প্রত্যেকটা ইউরিনাল বেসিনের সামনে বিশাল লাইন দেখে তা আর বুঝতে কষ্ট হয়না। সে ভাবল, এখন যদি লাইনের পেছনে দাঁড়াই, দশ মিনিট মতন মিস করে যাব। তবে কপাল ভাল, এ লাইনটা তাড়াতাড়ি এগোচ্ছে। সামনের লোকগুলোর বিয়োগযোগ্য জল খুব বেশি নেই দেখা যাচ্ছে।
বেশ এগোচ্ছিল লাইনটা, ইয়ে যে খুব পেয়েছে, তাও নয়। তবু সেফ সাইডে থাকতে হয় বলেই না ইন্টারভ্যাল না মিশন কী যেন বলে, সে সময়ে এত লোকের ভীড় এখানে। এখন বেসিনে দাঁড়িয়ে এক দীর্ঘদেহী মানুষ। গায়ে বেশ দামি জামাকাপড়, যথেষ্ঠই দামি। কিরে বাবা, এতক্ষণ মোতে কেন, সারাদিন যায়নি নাকি? এনার ঠিক পেছনের লোকটা বাঁ পাশে একটা খালি পেয়ে সুট করে গলে গেল। সেই আগের লোকটি এখন দীর্ঘদেহীর ঠিক পেছনে। একবার ভাবল, আমিও বাঁ দিকের লোকটার পেছনে চলে যাব? কিন্তু অত ভাবলে চলে? সেখানে ততক্ষণে একজন দাঁড়িয়ে গেছে। ওরে সর না বাবা। ডানদিকে একজন ঢুকল এবার। মোটামুটি কমই বয়স। দীর্ঘদেহী আকাশে, না সিলিং-এর দিকে মুখ তুলে রয়েছেন। অনেকে হিসি করার সময়ে ওপর দিকে মুখ রাখেন, যাতে গন্ধ টন্ধ কম যায় নাকে। ডান দিকের লোকটা হঠাৎ বলল, ‘ভাল আছিস?’ পেছনের মানুষটি পড়েছে ফাঁপরে। সিনেমা অনেকটা হয়ে গেছে বলে মনটা উচাটন ছিল। কিন্তু এখানে কী ব্যাপার? ডান দিকের লোকটা তো আমারই বয়সী মনে হচ্ছে। সামনের লম্বা লোকটা তো মেরে কেটে পঞ্চাশ পঞ্চান্ন হবেই, তাকে ‘তুই’ বলছে? তিনি অবশ্য কোনও উত্তর দেননি। লোকটা পাগল নাকি? এর পরেই তো আমার পালা। এর পাশে দাঁড়ানোও তো বিপদ।
সামনের লম্বা লোকটি এবার হাত ঝাঁকুনি দিচ্ছেন, মানে হয়ে গেছে। বাব্বাঃ, মাইরি মোতায় বিশ্বরেকর্ড করল বোধহয়। তিনি বেরোবার মুখে এ লোকটা ফাজিল ফাজিল মুখ করে বলল, ‘দাদা, হয়ে গেল?’ তিনি অবশ্য তাতে কিছু মনে করেননি। কথাটা কানে যায়ওনি মনে হয়। তিনি ডান দিকের লোকটিকে বললেন, ‘তোরা কেমন আছিস?’ আগের লোকটা বেসিনে দাঁড়িয়েই মাথা ঘুরিয়ে দেখল, আরে! ইনিওতো তুই বলছেন, কেস টা কী?
ওরা কথা বলতে বলতে পাশাপাশি হাঁটছে। ‘প্রসাধন’ লেখা ঘরটার ছোট দুটো সিঁড়ির ধাপ পেরিয়ে এবার হলের প্রবেশ পথের দিকে। দীর্ঘদেহী জিজ্ঞেস করলেন, ‘কোথায় বসেছিস?’ অন্যজন বলল, ‘আমার কম দামি সীট, সত্তর টাকার’। লম্বা মানুষ বললেন, ‘ও, একা এসেছিস?’ অন্যজন বলল, ‘না ও আছে তো’। দীর্ঘদেহী বললেন, ‘সিনেমাটা কি দেখতেই হবে? চলনা একটু কথা বলি’। অপরজন বলল, ‘কিন্তু কাবে-‘ তিনি বললেন, ‘কাবেরী? ওর কাছে ফোন নেই? ভাইব্রেশনে আছে তো। ফোন করে বলে দে, শো শেষ হলে দেখা করবি। সাসপেন্সে রাখিসনা, বলে দে আমার সঙ্গে আছিস’। অপেক্ষাকৃত কম বয়সী বলল, ‘হঠাৎ সিনেমা না দেখে তোর সঙ্গে যাচ্ছি শুনলে তো আরও সাসপেন্সে থাকবে’। লম্বা মানুষ মৃদু হেসে বললেন, ‘মেয়েদের ছ’ নম্বর ইন্দ্রিয়টা আমাদের চেয়ে স্ট্রংগার। নে, ফোন করে দে’।
উঁচু উঁচু বার স্টুলে বসা দুজন, সম্ভ্রান্ত চেহারার লম্বা মানুষ বললেন, ‘বীয়ার খাস তো?’ সাধারণ চেহারার ততটা লম্বা নয় বলল, ‘খাইনা তা নয়, তবে বিশেষ কোনও অকেশন ছাড়া তো ড্রিংক করিনি কোনোদিন। মানে কাবেরী যদি -০’ সম্ভ্রান্ত বললেন, ‘ধুস্ বীয়ার আবার ড্রিংক হল কবে থেকে। আর কাবেরী যদি মানে? একটু পুরুষ পুরুষ হ’ বুঝলি? সব সময়ে বৌয়ের কথায়’ – কম বয়সী লোক থামিয়ে দিল, ‘তোর মত পুরুষ?’ লম্বা মানুষটি গম্ভীর হয়ে গেলেন। বীয়ার এসে গেছে। বেয়ারাটা বাড়িতে ময়লা গেঞ্জির সঙ্গে লুঙ্গি পরলেও এখানে ধপধপে সাদা জামার ওপর ওয়েস্টকোট পরে আছে, তার সামনেটা কালো আর পেছনটা ছাই রঙের। বোতলটা ফটাশ করে খুলে বলল, ‘সার, শুড আই -?’ দীর্ঘদেহী হাত দিয়ে ইশারা করলেন, হ্যাঁ ঢালো। আসলে যতই ‘শুড আই’ – বলে জিজ্ঞাসু চোখে তাকাক, ওর বেশি ইংরিজি তার জানা নেই, সম্ভ্রান্ত চেহারার মানুষটি পরিষ্কার বাংলায় বললেন, ‘এই যে ভাই, একটা লিমকা নিয়ে এস তো’। তারপর বিড়বিড় করে বললেন, ‘শালা সাহেবগুলো কবে চলে গেছে, ইংরিজি আর পেছন ছাড়েনা’। অন্যজন বলল, ‘লিমকা কী হবে?’ ইনি বললেন, ‘দাঁড়ানা, শ্যান্ডি বানাব। ওকে বানিয়ে দিতে বললে খামোখা একগাদা পয়সা নেবে’। সে বলল, ‘তোর আবার পয়সার অভাব কবে থেকে?’ ইনি বললেন, ‘অভাব কোনওদিনই নেই, তবে অকারনে পয়সা ছড়াতে শুরু করলেই অভাবটা তৈরী হ’ত, অনেকেরই হয়’।
‘শ্যান্ডি’ নামে খুব সহজ ককটেলটা তৈরী হয়ে গেল। বয়স্ক মানুষটি গ্লাস দুটোর ধারে একটু করে নুন মাখিয়ে নিয়ে উঁচু করে ধরলেন – ‘চীয়ার্স’। কম বয়সী বলল, ‘এই তো সাহেবদের গাল দিচ্ছিলি, আবার সাহেবি কেতা তো খুব মানিস, এই চীয়ার্স টিয়ার্স?’ সম্ভ্রান্ত চেহারার লম্বা মানুষটি উদাস ভাবে বললেন, ‘সাহেবরা ঠিক নয়, তবে প্রথাটা তো ইওরোপেরই। জার্মানরা গ্লাসে গ্লাসে ঠুকতো। ওদের ধারনা, এতে মদের মধ্যে যদি কোনও অশুভ আত্মা থেকে থাকে, সে পালাবে। আর ফরাসি আলেক্সাঁদ্রে দুমা লিখেছেন, ওটা করা হত, যাতে গ্লাসে গ্লাসে ঠুকলে, ভর্তি তরল একে অপরের পাত্রে চলকে পড়ে। তাতে কেউ অপরের গ্লাসে বিষ মেশাতে সাহস করতনা। তাতে তো নিজের গ্লাসেও খানিকটা এসে যাবে’।
কম বয়সী বলল, ‘আমরা তো ঠুকলামনা, শুধু উঁচু করলাম। তবে তোর ভয় নেই, আমি কোনওদিনই তোর গ্লাসে -’ ইনি বললেন ‘ভয়টাতো তোর থাকার কথা। যদি আমি মেশাই – মানে আমারই মেশানোর কারনটা বেশি তো। মানে তোকে সরিয়ে দিতে পারলেই – নাঃ বারে বসে কেউ বিষ খাওয়ায় না। ধরা পড়ে যাবে তো। যাকগে, ছাড় ও কথা, থাকিস কোথায় এখন, ফ্ল্যাট কিনেছিস?’ সে বলে, ‘ও বাবা, ফ্ল্যাট কিনব কোদ্দিয়ে, একটা বাড়ি করেছিলাম সোনারপুরে। তখন সব সস্তা ছিল, জমি, মাল মেটিরিয়াল, তাই পেরেছিলাম। টালির চাল, কিন্তু ফলস সিলিং আছে, গরম টরম হয়না। খানিকটা জমি ছিল, শখের বাগানও করেছিলাম। বড় গাছও ছিল ক’টা’ – ইনি বাধা দিয়ে বললেন, ‘ছিল মানে?’ – ‘ছিল মানে, আর রাখতে পারব বলে তো মনে হচ্ছেনা। খুব প্রেসার। ওটাতো এখন কোলকাতা হয়ে গেছে। চারদিকে উঁচু উঁচু হাইরাইজ, প্রোমোটারের দালালরা এসে রোজ বিরক্ত করছে, থ্রেটও করছে। কী করে আটকাব। বেচে দিয়ে পালাতেই হবে। তুই? তোর নিশ্চয় বিশাল ফ্ল্যাট? ওই জমিতেই?’ – ‘নাঃ, ফ্ল্যাট এখনও হয়নি। হলে তো সবাই পাবে। আমি পুরোন বাড়িতেই আছি। একা থাকি বলে মাল খাওয়াটা একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে’। কম বয়সী বলল, ‘সেকি? একা মানে? কী হয়েছে?’ বেশি বয়সী বললেন, ‘কী আবার হবে। সুরঞ্জনা বাপের বাড়িতে থাকে। ডিভোর্স ঠিক হয়নি, তবে ওই আর কি’।
অন্যজন চোখ ছোট করে ভুরু কোঁচকায়। ‘কারনটা কি জানতে পারি? অবশ্য পার্সোনাল ম্যাটার, কিন্তু জানার খানিকটা অধিকার তো আমার আছেই’। বড়জনের গ্লাস খালি, তিনি বললেন, ‘বেয়ারা – কারনটা তোর তো জানার কথা, আন্দাজ করতে পারিসনা? যাকগে, তোরা কি দুজনই, না তিন চার কিছু হয়েছিস?’ সে হাসে, ‘না না চার ফার না, চালাব কী করে, মানুষ করতে হবে তো। একটাই ছেলে, ক্লাস এইট’। – ‘এইট! বলিসকি, তার মানে তের চোদ্দ, বাপরে টাইম ফ্লাইস, সময় কি জোর দৌড়য় রে। তুই আর একটা নিবি তো?’ সে বলে, ‘থাকনা, নেশা হয়ে যাবে। ইনি বলেন, বীয়ার খেয়ে নেশা? হাসালি বটে। বেয়ারা – একটা হাইনেকেন আর একটা লিমকা’।
‘দাদা, আর খাবোনারে, কাবেরী জানতে পারলে অশান্তি করবে, বলল ছোটজন’। বড়জন বললেন, ‘কী অদ্ভুত প্যারাডক্স না? তোদের বাড়ি ছাড়তে হ’ল বলে আমার বৌকে আমি তাড়িয়ে দিলাম, আর তুই বৌএর ভয়ে দাদার সঙ্গে মাল খাবিনা, অ্যাঁ ?’ ছোটভাই বলল, ‘তাড়িয়ে দিলি, কেন? ছি ছি এটা কী করলি’। দাদা বললেন, ‘তাড়িয়ে কি আর দিয়েছি, সে নিজেই চলে গেছে। আমি বলেছি, বাড়ি বিক্রী হবেনা। যদি হয়, আমার ভাই এই বাড়িতেই ফ্ল্যাট পাবে, টাকা নয়। প্রোমোটার বাড়িটা প্রায় নিয়েই নিচ্ছিল। হঠাৎ বাড়ি পরিষ্কার করতে গিয়ে ছোটবেলার অ্যালবামটা হাতে এল জানিস, সব দৃশ্যগুলো চোখের সামনে নাচতে আরম্ভ করল। পেছনের সেই জামরুল গাছটাও তো কেটে ফেলত, যেটা থেকে পড়ে মারাই যেতাম তুই না থাকলে। অন্য লোকের বাড়ি থেকে দুটো মেয়ে এসে – কেন রে? মেনে নেব কেন?’
ছোটভাই বলল, ‘নারে দাদা, এটা এত সহজ ব্যাপার না। কাবেরী গরীব ঘরের মেয়ে হলেও ঝি তো না, যে বাড়ির সব কাজ করবে। তার বদলে দুটো কাজের লোক রাখতে হ’ত। তাদের মাইনে শেয়ার করতে হ’ত আমাকে। আমি তো পারতামনা’। দাদা বললেন, ‘সে ব্যাপারটা তো আমি দেখব, রোজগার তো আমি করি, সুরঞ্জনা তো করেনা। তাহলে? তাহলে আমরা একসঙ্গে থাকতে পারবনা?’ ছোট বলল, ‘নারে দাদা, বৌদিকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে ফেরত নিয়ে আয়। চোদ্দ বছর বাড়ি ছেড়েছি, আর মায়া নেই বাড়িটার প্রতি। মাঝে মাঝে কষ্ট হয় বৈকি। তবে কাবেরী দৌড়ে গিয়ে বৌদির পায়ে পড়ল, বৌদিও বুকে টেনে নিল, আমার ছেলেকে বলল, জ্যেঠিমাকে ছেড়ে এতদিন থাকতে পারলি? এটা হতে পারে কেউ চিত্রনাট্য লিখলে। বাংলা হল টলে বেশ চলত ছবিটা। বাস্তবে ও হবার নয়। কারো হয়না। কোলকাতায় হাজার হাজার গেরস্ত বাড়ি ভেঙে যাচ্ছে রোজ। প্রোমোটারগুলো প্রথমে লোভ দেখায়, তারপর জোর করে, শেষে ভয় দেখায়, সাধারণ মানুষের ক্ষমতা নেই ঠেকানোর। আমার বাড়ির পেছনেও একটা জামরুল গাছ লাগিয়েছিলাম, রাখতে পারবনারে। সোনারপুরেই পারছিনা তো কোলকাতায়। প্রোমোটার লোকটা বৌদির পিসতুতো ভাই নারে?’
সিনেমা হলের শো ভেঙে গেছে। যাদের অনেকক্ষণ এ সি তে থাকা অভ্যেস নেই তাদের বাথরুম পাবেই। সেই লোকটা আবার যাচ্ছিল প্রসাধন লেখা ঘরটার দিকে। হঠাৎ দেখল সামনে একটা লম্বা লোক, অন্য লোকটাও আছে। সে দৌড়ে গিয়ে বলল, ‘দাদা, কাইন্ডলি আমায় আগে যেতে দেন। আপনার একটু বেশি সময় লাগে তো’ – লম্বা মানুষ বললেন, ‘ক্ষেপেছেন, তিন বোতল বীয়ার খেইচি, হেভি প্রেসার। লাইনে দাঁড়ান, না পারলে বাইরে গিয়ে দেয়ালে মারুন। পুলিশ ধরলে ধরবে’। লোকটা ব্যাজার মুখে দাঁড়াল ইষ্ট নাম জপতে জপতে। মাঝে মাঝে পা দুটো আগুপিছু করছিল নাচার মতন করে, উফ আর কয়েক মিনিট থাক মাইরি, সামনে তো বিশ্ব রেকর্ড করা লোক, তার ওপর তিন বোতল বীয়ার –
অবশেষে সুযোগ এল। বেসিনে দাঁড়িয়ে তার মুখ দিয়ে বেরিয়েই গেল ‘– আঃ’। – পাশে তাকিয়ে দেখে, শোয়ের প্রথম দিকে যাকে প্রস্রাবাগারের অবস্থান জিজ্ঞেস করেছিল, সেই লোকটা পাশের বেসিনে। তখন সে বিড়বিড় করে বলল, ‘শেক্সপীয়র বলেছিলেন গোলাপকে যে নামেই ডাকো – হেঁ হেঁ পেচ্ছাপখানা হচ্ছে পেচ্ছাপখানা, লু-ই বল, আর প্রসাধন-ই বল’। পাশের লোকটা অস্ফুটে বলল, ‘স্টুপিড বাগার’।
Facebook Comments