কাঁচালঙ্কা-মুরগী উপাখ্যান

klm

আয়রে দিদি, সতীন আমার, নাতির মিষ্টি বউ;

ঘোমটাখানা খোল না এবার, দেখছে না তো কেউ।

এই দিকে আয় শেখাই তোকে দারুন একটা পদ;

ঝাল ছাড়া তার মন ওঠেনা, নাতি বেজায় বদ।

তোর হাতে এই ভাঁড়ার ঘরের দিচ্ছি চাবিখানি,

আলো করে থাকিস দিদি, হয়ে বাছার রানী।

আয় দেখি ভাই, আজকে বরং একবারটি রাঁধ।

নাতি আমার বুঝবে দেখিস, এ তার বৌয়ের স্বাদ।

পাঁচশত গ্রাম রামপাখী দেখ, রাখছি জবাই করে;

ছোট ছোট টুকরো কাটিস, হাত কাটিস না ওরে।

ইতিমধ্যে মশলা দেখি বাট্ তো কিছু মা;

আধটুকু তার সরিয়ে রাখিস, এখন লাগবে না।

সবুজ লঙ্কা চার খানি নে, হোক দেখি বেশ ঝাল;

ওরে বাবা সবুজ রং ই, চলবে নাকো লাল।

লেবুর রস এক চাচামচ, একটু ধনেপাতা,

টাটকা হলে স্বাদ খুলবে, বলছি ধরাবাঁধা;

চার ছ’টা নাও রসুন কোয়া, ছয় চাচামচ আদা,

এক চা চামচ সরিষার তেল, চলবে না রে সাদা।

মোলাম করে বাট্ রে বাছা জলের ছিটে দিয়ে,

আধেক ঢেকে সরিয়ে রাখো, আধেক খানি নিয়ে।

মাখাও এবার মশলাটুকু মাংসগুলোয় কষে-

ঘন্টা খানেক ঝড়িয়ে থাকুক তেলে ঝালে মিশে।

আয় দেখি ভাই চুল বেঁধে দি, আলতা দি তোর পায়ে,

সময়টুকু কাটাই দুটি সুখের কথা ক’য়ে…

 

*****

…চল দেখি ওঠ, পু’ড়লো হয়তো ঘন্টা খানেক সময়-

নে দেখি ওই পাতিল খানা, বসা এবার চুলায়;

সরষের তেল দাও দেখি মা চামচ ছয়েক বোধহয়,

দারচিনি আর এলাচ ফোড়ন, ভুল যেন আর না হয়।

ওরে দিদি তাড়াহুড়ো করিসনি আর এত,

পাতিল ‘পরে তেলটা আগে গরম হতে দে তো!

উঠলো ধোঁয়া? নে দেখি দে ফোড়নগুলো ছেড়ে,

এক চা চামচ আদার সাথে চারটে লংকা চিড়ে।

হলো?

একটা কাপ, ভর তো দিদি, পিঁয়াজকুচি দিয়ে,

নে ঢেলে দে তেলের ‘পরে একটু চিনি দিয়ে;

সোনালী রং ধরলে বুঝবো ভালোবাসিস ওকে,

নাতি আমার বড্ড একা জড়িয়ে থাকিস বুকে।

ও মা!

ঢের হয়েছে, আঁচটা কমাও, নাড়তে থাকো ধীরে,

ওকি ওকি মশলা বাকী আছে দেখি পড়ে!

আন দেখি ভাই মশলাটুকু, ঢাল তো বাছা তেলে,

মিনিট দুয়েক নাড়তে থাকনা, রাখিস কেনো ফেলে?

নে দেখি আন মশলামাখা মুরগীটুকরো গুলো,

আস্তে আস্তে পাত্রে ছাড়ো আঁচ কমিয়ে চুলোর,

বেশ কষিয়ে নাড়তো রে মা আটটি মিনিট ধরে,

নুন দে এবার স্বাদ মতো তোর, মুখটা না যায় পুড়ে;

আছে না দিদি গোটা ছয়েক কাঁচা লংকা আরও?

দাও দিকিনি এরই মধ্যে, বেশ ঝাল ঝাল করো।

আঁচল বেঁধে কষতে থাকো আঁচ কমিয়ে দিয়ে,

জল দিসনি খুব বেশী আর তলায় না লাগে গিয়ে।

দশটি মিনিট লাগবে আরও, তাতেই হবে কষা;

শুকনো শুকনো নামাস বাছা, খেতে হবে খাসা।

গরম ভাত বা রুটির সাথে চলবে এ’পদ ভালো,

আশিষ দিলাম দ্রৌপদী হয়ে সাঁঝের প্রদীপ জ্বালো।।

Facebook Comments