দেবীপক্ষে

দেবীপক্ষের সূচনাকালেই মুনাইয়ের জন্মদিন। দু’আজলা ফুল তুলে অঞ্জলি দেব? বিসর্জনের ঘাটে দাঁড়িয়ে জলের ভেঙে যাওয়া দেখছি। শরতের শিশিরে ভিজে যে জন্মদিন হৃদয়ে হৃদয় রেখে কেটেছে, সেখানে ছিল দেবীদর্শন। এখন শহর থেকে দূরে ছায়ার উপর কাটাকাটি আর জীবনের সঙ্গে হেডটেল।

স্মৃতিরা বড় অবাধ্য। দেওয়াল মানতে চায় না। ভাঙতে ভাঙতে ক্লান্ত হয় আবার একসময় ঘুমিয়েও পড়ে। আমি চুন-সুরকির ঘরে বসে নিজের ত্রিমাত্রিক প্রচ্ছদ আঁকি। লিওনার্দোর আঙুলে এত চুমু জমে গেছে, সেই হাসির ভিতরকার মায়া একটা মুনাই ছাড়া কীই বা আঁকতে পারে? ভাবি, হে ঈশ্বর তুমি কেন ভর করো? পিছলে যাওয়া মানুষের জন্য কেবল পড়ে থাকে অন্ধকার। এই এত আলো! ডাক পড়ে না।

তুলোর ক্ষত নিয়ে প্রেমিকের লাফালাফি আয়ুহীন। নীরবতার চাদরে আদর জমলেও তা বাষ্প হতে কতক্ষণ? উত্তাপ বাড়ে, পুড়ে যায়। আকাশে হাসে সাদা কেকের গায়ে বোরকা পরা জন্মদিন। এরপরও বলি ‘শুভ জন্মদিন’?

কোনো একদিন হয়ত ইতিহাসে লেখা হবে মুনাইয়ের নাম। আমার শবের উপর দিয়ে ভেসে যাবে দেবী। কান্নার জলভাঙা নৌকায় পাল তুলে দূরত্বে বাজবে ছুটির ঘণ্টা। সেদিন কোনো বিসর্জন নয়। আলোর মিছিলের উপর হেঁটে যাবে রক্তমাখা সাদা পাখি। যার ডানায় লেগে থাকা হলুদ রোদ পড়বে আমার কপালে। পাখি উড়েই যাবে। টপটপ করে পড়া কয়েকফোঁটা রক্ত আমার বুকে তরমুজের মতো জ্বলবে। আত্মহত্যার অনুসন্ধান চলবে। প্রেমিকের খোঁজ কেউ নেবে না।

মানুষ মরে, প্রেমিক মরে না। তবে দেবীর মতো সেও বিসর্জন হয়, ভুলে গেলেও মৃত্যু উৎসব পালিত হয় বছরে বছরে।

আজ মুনাইয়ের জন্মদিন। অথচ প্রিয় অঞ্জলির পাশে পা নেই। বুকে পেতেছি। বুকে ঠেকে গেছে নিজের ভোঁতা মাথা। মাথার উপর দিয়ে চলে যাচ্ছে বিরাট কংক্রীট রাস্তা। পথ নেই।

নির্ভরযোগ্যতার দোলনায় পৃথিবী বড়ই আদিম। নতুন করে যেটুকু দোলা যায় সেখানে দেবীপক্ষের আগেই চিরনির্বাসনে আমার হাত আঙুলের অবৈধতা নিয়ে ঝুলে গেছে। ছুঁয়ে থাকা এখন এক বিরল প্রজাতির বাস্তু ও বহনের আষাঢ়স্য মাস।

এই উৎসব মূহূর্তে একা প্রেমিক তার বোবা শব্দের গায়ে যেভাবে গয়না পরাচ্ছে, আর শৈল্পিক স্থিরতার পাশে ডুবে যাচ্ছে আকাশকুসুম রঙ। সেখানে অনস্তিত্বই ঘর।

এই যে জন্মদিনে হেঁটে যাওয়া চুপগাছ হেলে গ্যাছে অস্তিত্বের ভিতর, আর জীবনের রঙ কাটা কেকের মতো ছড়িয়ে। ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে সাদা সাদা পিচ্ছিল ক্রীম। যেন সব শবের বিষাদক্ষয়।

আজ একবারও বলব না, ‘পাগলি এক মারব’। আজ একবারও ছুঁয়ে থাকার আদেখলাপনায় বাড়াব না আমার বামুন হাত। শুধু বলব, ‘শুভ জন্মদিন’। শুধু বলব, ‘ফুল নিও না, অঞ্জলি নাও’।

Facebook Comments