চুমকির জন্য
চুমকির জন্য
চুমকি আমার ছোটবোন।
সে যদি লিখতে বলে তবে
নিজের মগজখানি খুঁড়ে,
তাকে কিছু লিখে দিতে হবে।
কী থাকবে সেই লেখাটিতে?
যা দেখেছি এ’ জীবন জুড়ে
কিছুটা ঝর্ণা দিয়ে ঢাকা,
বাকিটুকু দারুণ পাথুরে।
শুরুতে থাকবে এক গ্রাম।
রাঙামাটি পথে ছোটোবেলা
হেঁটে যাবে। সারা পায় ধুলো।
কানা বিল… চড়কের মেলা।
ভোর বেলা মা ডাকলে রোজ
ক্রোশ দুই দূরে ইশকুলে
হেঁটে যাই, সাথে যায় ছায়া।
পড়াশুনো হবে দুলে দুলে।
মহরমে দারুণ তাজিয়া।
মকবুল চাচা সেইখানে
বনবন ঘোরাচ্ছে লাঠি
আরও কত কসরত জানে।
অড়হর ক্ষেতে কুবো পাখি
চৌপর দিন ধরে ডাকে
ছটফটে খেলুড়েরা খোঁজে
সোনালী বিকেলবেলা … কাকে?
শাঁখের আওয়াজে সাঁঝবেলা।
হ্যারিকেন যতটুকু পারে,
আলো ঢালে। দেওয়ালে নিঝুম
স্বপ্নেরা উঁকিঝুঁকি মারে।
বাইরে তখন ঝোপেঝাড়ে
জ্বলে নেভে তারাদের ভিড়
দিদি বলে, দূর বোকা ছেলে
ওই আলো সবই জোনাকির।
শান্ত এমন গ্রামপালা
থেমে যাবে কিছুদিন পর।
শেকড় ছেঁড়া এ’ বৃক্ষটি
চিনে নেবে আজব শহর।
মধ্যবিত্ত বাবাটি’র
মনে খুব নিরুপায় ভয়
ইঁদুরদৌড়ে যেতে হবে
এইবারে তাই নিশ্চয়।
কৌশলী পাথুরে শহর
ছেলেটাকে ঢেলে নেবে ছাঁচে
মুছে যাবে ভোরের শিশির
যে’ভাবে পাথরকুচি বাঁচে।
সকলে মুখোস দেখে ভোলে
চুমকি, যা জানিস না তুই
আজও সে খুঁজছে তার গ্রাম
এ’শহর এখনও বিভুঁই।
(পুনঃপ্রকাশিত)
অলংকরণ : সমীরণ মন্ডল
Facebook Comments