অ-লেখকের কথা

মাঝে মাঝে আমি লিখব ভেবে বসি । তারপর বেশ কিছুক্ষণের কাগজে কলমে যুদ্ধে তৈরি হয় কয়েকটা আঁকিবুঁকি, কাটাকুটি । লেখা হয়না । কিন্তু যারা লেখেন কত অকিঞ্চিৎকর ঘটনাকেই ছবির মত ফুটিয়ে তোলেন । আমি পারিনা কিছুতেই ।

প্রায়শই আমি বাসে ঝুলতে ঝুলতে বাড়ি ফিরি। একজন লেখক হলে লিখতেন “পিঠের ব্যাগটাকে সামনে নিয়ে ঘড়ঘড় শব্দ করতে করতে এগিয়ে আসা বাস নামক যন্ত্রপশুর দরজায় মৌমাছির ঝাঁকের মত এঁটে থাকা মানুষগুলোর মধ্যে দিয়ে হাত ঢুকিয়ে অলৌকিক দক্ষতায় একটা অবলম্বন যোগাড় করে ঝুলে পরলেন অমুক বাবু ” ।

এরপর কন্ডাক্টর ভাড়া চায় আমি কোনও ক্রমে টাকা বের করে ভাড়া দি । লেখক হয়তো লিখতেন “ অমুক বাবু ঝুলতে ঝুলতেই খেয়াল করলেন তাঁর থেকেও ধুরন্ধর একজন বাসের দরজার ঠিক উপরের রড ধরে ঝুলে রয়েছে। লোকটার পা দুটো কোথায় ঠিক দেখা যায়না। দরজা থেকে উঠুন দাদা, পিছনের দিকে এগোন, হই ট্যাক্সি , বাঁয়ে অটো বলতে বলতে লোকটা হঠাৎ দাবী করে দেখি দাদা ভাড়া টা… । অগত্যা ভীষণ বিরক্ত অমুক বাবু এক পায়ে ভর দিয়ে ও এক হাতে খড়কুটোর মত যা পাওয়া যায় আঁকড়ে ধরে দ্বিতীয় হাতটা খুঁজে নেন । তারপর সেটা পকেটে চালান করে দেহের উপরের অংশ খানিক ভাসিয়ে পকেট থেকে ১০ টাকার একটা নোট বের করে কন্ডাক্টরকে দেন ও ফিরতি দুটাকা পকেটে পোরেন ।”

আমার দৃষ্টিও খুব সাদামাটা । লেখকেরা অনেক কিছুই দেখতে পান যা আমি পাইনা । যে পথে আমি যাতায়াত করি সে পথে ‘বৈশাখী খেয়া’ নামের একটা জায়গা আছে । খেয়া কথাটা শুনলেই ধীরেসুস্থে প্রবহমান একটা নদীর কথা মনে পরে । কিন্তু এ জায়গাটায় একটা খালের উপর ছোট মতন একখানা ফুট-ব্রিজ । খালটায় শহরের একটা অংশের নর্দমার জল এসে মেশে । মিশমিশে কালো, দুর্গন্ধময় জলপূর্ণ খালের ধারটার নাম যিনি খেয়া দিয়েছেন তিনি নিশ্চয়ই কোনও কবি। হয়তো ফুট-ব্রিজের উপর থেকে কালো জলে তিনি কারোর ভাসিয়ে দেওয়া সাদা কাগজের নৌকা দেখেছিলেন । খালের স্থির জলে সে নৌকা হয়তো আজও ভাসে কিন্তু আমি দেখিনি কোনও দিন ।

এরপর বাড়ি পৌঁছে আমি বিছানায় গড়িয়ে পড়ি । আস্তে আস্তে চোখের পাতা ভারী হয় । তারপর নিরেট অন্ধকারের মধ্যে দেখি একজন লেখক লিখে রাখছেন আমার দিন যাপনের গল্প।

Facebook Comments